কারক কী / কারক কাকে বলে? কারক কত প্রকার ও কি কি? কারক সহজে মনে রাখার কৌশল
কারক কী / কারক কাকে বলে?
বংলা ব্যাকরণে সুপরিচিত একটি নাম কারক যা এসেছে সংস্কৃত থেকে। 'কারক' শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ হলো 'কৃ + অক'।
বাক্যে ক্রিয়াপদের সাথে নামপদের যে সম্পর্ক তাকেই কারক বলা হয়।
এখন ক্রিয়াপদ এবং নামপদ কি প্রথমে সে বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।
একটা বাক্যে যা দিয়ে কাজ করা বোঝায় তাই হচ্ছে ক্রিয়াপদ। ক্রীয়াপদের কাজ হচ্ছে কাজ করা। এবং ক্রিয়াপদ ছাড়া বাক্যে ব্যবহৃত পুরো অংশটুকুই নামপদ।
বোঝার সুবিধার্থে আমরা একটা উদাহরণ নেই।
যেমন : সুমন নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায়।
উপরিউক্ত উদাহরণে 'যায়' শব্দটি হচ্ছে ক্রিয়াপদ। কারণ 'যায়' শব্দটি দ্বারা কাজ করা বোঝাচ্ছে। সুমনের বিদ্যালয়ে যাওয়া বোঝাচ্ছে। আর আমরা জেনেছি যে, বাক্যে যা দ্বারা কাজ করা বোঝায় তাকেই ক্রিয়াপদ বলে।
ক্রিয়াপদ ছাড়া শুধু নামপদ দিয়ে বাক্যের নির্দিষ্ট কোনো অর্থ বোঝায় না। আমরা এখানে যদি ক্রীয়াপদ ছাড়া বাকী অংশটুকু নেই তা হলো, ' সুমন নিয়মিত বিদ্যালয়ে '। এ দ্বারা নির্দিষ্ট কোনো অর্থ বোঝা যায় না। তাই বাক্যের নির্দিষ্ট কোনো অর্থের জন্য নামপদের সাথে ক্রিয়াপদের প্রয়োজন রয়েছে। আর এই নামপদের সাথে ক্রিয়াপদের যেই মিল বন্ধন বা সম্পর্ক তাকেই কারক বলা হয়।
কারক কত প্রকার ও কি কি?
কারক মূলত ছয় (৬) প্রকার। যথা:
১. কর্তৃকারক।
২. কর্মকারক।
৩. করণ কারক।
৪. সম্প্রদান কারক।
৫. অপাদান কারক।
৬. অধিকরণ কারক।
কারক সহজে মনে রাখার কৌশল
বাক্য থেকে কারক নির্ণয় করার কিছু সহজ কৌশল রয়েছে যা আয়ত্ত করতে পারলে কারক নির্ণয় করা সহজ হয়ে যাবে। নিচে কারক নির্ণয়ের নিয়মগুলো দেওয়া হলো :
প্রথমে বাক্যে ব্যবহৃত ক্রিয়াকে নির্ণয় করতে হবে। তারপর...
- ক্রিয়াকে 'কে' দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যাবে তা হলো 'কর্তৃকারক'।
- ক্রিয়াকে 'কী' বা 'কাকে' দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যাবে তা হলো 'কর্মকারক'।
- ক্রিয়াকে 'কী দ্বারা' প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যাবে তা হলো 'করণ কারক'।
- ক্রিয়াকে 'কাকে' ( স্বত্বত্যাগ করে প্রদান ) দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যাবে তা হলো 'সম্প্রদান কারক'।
- ক্রিয়াকে 'কোথা হতে' দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যাবে তা হলো 'অপাদান কারক'।
- ক্রিয়াকে 'কোথায় বা কখন' দ্বারা প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যাবে তা হলো 'অধিকরণ কারক'।
সবগুলো কারক একসাথে বোঝার জন্য একটি উদাহরণ নেওয়া হলো ( উদাহরণটি সপ্তম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ হতে সংগৃহীত )
' বাদশা নাসির উদ্দিন প্রত্যহ সকালে রাজকোষ হতে স্বহস্তে দরিদ্রদেরকে ধন দান করতেন '
উল্লিখিত উদাহরণে ক্রিয়াপদ হচ্ছে 'দান করতেন'।
এখন আমরা উদাহরণটি থেকে উপরে উল্লিখিত কৌশলগুলো অবলম্বন করে কারক নির্ণয় করবো।
প্রথমে কর্তৃকারক নির্ণয় করার জন্য যে কৌশলটি অবলম্বন করতে হবে তা হলো ক্রিয়াপদকে 'কে' দ্বার প্রশ্ন করতে হবে এবং উত্তরে যা আসবে তাই হলো কর্তৃকারক। এখানে ক্রিয়াপদ হলো 'দান করতেন' এবং প্রশ্ন হলো 'কে দান করতেন?' উদাহরণে বলা আছে 'বাদশা নাসির উদ্দিন' দান করতেন। তাহলে এখানে বাদশা নাসির উদ্দিন হচ্ছে 'কর্তৃকারক'।
এভাবে বাকী কারকগুলো নির্ণয় করা যাক।
'কী' দান করতেন? তিনি 'ধন' দান করতেন। এখানে 'ধন' হলো 'কর্মকারক'।
'কী দ্বারা' দান করতেন? তিনি 'স্বহস্তে দান করতেন। এখানে 'স্বহস্তে' হলো 'করণ কারক'।
'কাদের' দান করতেন? তিনি 'দরিদ্রের দান করতেন? এখানে 'দরিদ্রের' হচ্ছে 'সম্প্রদান কারক'।
'কোথা হতে' দান করতেন? তিনি 'রাজকোষ হতে' দান করতেন। এখানে 'রাজকোষ' হচ্ছে 'অপাদান কারক'।
'কখন' দান করতেন? তিনি 'প্রত্যহ সকালে' দান করতেন। এখানে 'প্রত্যহ সকালে' হচ্ছে 'অধিকরণ কারক'।