রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কোনো সাহিত্যিকের নরি নেই যিনি সাহিত্যতত্ব সাছে এত গভীরভাবে বিচার করেছেন ও এত প্রচুর দিয়েছেন, যিনি একাধারে একজন বৌ র পয়লা নম্বরের সাহিত্যতত্ত্ববিহ্। এই দুর্লভ সংযোগ দেখি আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
নৌকাযাত্রা কবিতা - লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
এই পুজিঁবার 'আটক' বন্ধে রবীন্দ্রনাথ আর্ট সম্বন্ধে তার গোছাধো কবোষণার অভালো করেছেন। হার্টের বিচাৰ নীতি সাবে করা দরকার, মার্টের উদ্দেশ্য কী, আর্টে সৌন্দর্যের স্থান কোথায় – এই সব বিষয়ে হীন্দ্রনাথ আলোচনা করেছেন এতে। এই যে সময়ে সেখা, ইয়োরোপ ও আমেরিকায় তখন আর্টের ধারণা আধুনিক যুগের ঢেউয়ের বাজায় বদল হতে দেখেছে। ঘাটতে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজন সাধিতা বলে জাহির করবার জন্নে তখন আস্তিন-খোটানো সাহিত্য-বিচারকরা কলম ধরেছেন পাশ্চাত্য জগতে। আমাদের দেশেও, বিশেষ করে বাংলা দেশে, ন নবিবিয়ানা করতে সিদ্ধান্ত, জীবনের প্রয়োজনে আধুনিক সামবার শৌখিনতায় বিভোর বাঙালি শিক্ষিতেরা তখন তৈবিক প্রয়োজন সাধনতে আর্টের উদ্বেত বলে ছাহির করতে করেছেন। সাহিতের ड व ৗहे ধ্বনিও তখন শোনা যাকে সাহিত্যের জগতে।
সাহিত্যিক ও সাহিত্য-বিচারকেরা নকল না কিন্তু এই নতুন কথা বলেন নি। মননশীলতার দিক থেকে বিচার ক'রে ভিত নড়ে যাওয়া জীবনের সঙ্গে সাহিত্যের জন্য মেলাবার একটি আন্তরিক প্রচেষ্টা তারা করেছেন।
নৌকাযাত্রা কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ
নৌকাযাত্রা
মধু মাঝির ঐ যে নৌকোখানা
বাঁধা আছে রাজগঞ্জের হাটে,
কারো কোনো কাজে লাগছে না ত
বোঝাই করা আছে কেবল পাটে
আমায় যদি দেয় তা'রা নৌকাটি,
আমি তবে একশোটা দাড় আছি,
পাল তুলে দিই চারটে পাঁচটা চ~~-টা
মিথ্যে ঘুরে বেড়াইনাকো হাটে।
আমি কেবল হাই একটিবার
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার ।
তখন তুমি কেঁদো নামানে
বসে বসে একলা পরের কোণে,
আমি ত না যাচ্ছিনেক চলে’
রামের মত চোদ্দবছর বনে!
আমি যাব রাজপুত্র হয়ে
নৌকো স্তর সোনামানিক বয়ে,
আশুকে আর তাকে নেব সাথে,
আমরা শুধু যাব না তবে তিনজনে।
ভোরের বেলা দেব নৌকা ছেড়ে,
দেখতে দেখতে কোথায় যাব ভেসে
দুপুরবেলা তুমি পুকুর-ঘাটে,
আমরা তখন নতুন রাজার দেশে।
পেরিয়ে যাব তিরপুর্ণির ঘাট,
পেরিয়ে যাব তেপান্তরের মাঠ,
ফিরে আসতে সন্ধে হয়ে যাবে
গল্প বলব তোমার কোলে এসে।
আমি কেবল যাব একটিবার
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার।
তখন তুমি কেঁদো না মা, যেন
বসে বসে একলা ঘরের কোণে।
আমি তো মা, যাচ্ছি নাকো চলে
রামের মতো চোদ্দো বছর বনে।
আমি যাব রাজপুত্র হয়ে
নৌকা- ভরা সোনা মানিক বয়ে,
আশুকে আর শ্যামকে নেব সাথে,
আমরা শুধু যাব মা, তিন জনে।
আমি কেবল যাব একটিবার
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার।
মধু মাঝির ওই যে নৌকাখানা
বাঁধা আছে রাজগঞ্জের ঘাটে—
কারো কোনো কাজে লাগছে না তো,
বোঝাই-করা আছে কেবল পাটে।
আমায় যদি দেয় তারা নৌকাটি
আমি তবে একশোটা দাঁড় আঁটি,
পাল তুলে দিই চারটে পাঁচটা ছটা—
মিথ্যে ঘুরে বেড়াই নাকো হাটে,
আমি কেবল যাব একটিবার
সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার।
এক সকালে মা'র সঙ্গে গেলাম উত্তরায়ণে। খাতাটা দিতে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘এটা থাক আমার কাছে ; কাল সকালে এসে নিয়ে যেও। কথা মতো গেলাম পরের দিন । টেবিলের উপর চিঠি-পত্র খাতা বইরের ডাই, তার পিছনে বসে আছেন রবীন্দ্রনাথ, আর আমায় দেখেই আমার ছোট্ট বেগুনী খাতাটা খুঁজতে লেগেছেন সেই ভীড়ের মধ্যে । মিনিট তিনেক হাতড়ানোর পরে বেরোল খাতাটা । সেটা আমায় দিয়ে মা'র দিকে চেয়ে বললেন, ‘এটার মানে ও আরেকটু বড় হলে বুঝবে।' খাতা খুলে পড়ে দেখি আট লাইনের কবিতা, যেটা আজ অনেকেরই জানা বহুদিন ধর' বহু কোশ দূরে বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘরে দেখিতে গিয়ে জি পর্বতমালা নৌকাযাত্রা।
Also Read: আজ সৃষ্টি - সুখের উল্লাসে – কাজী নজরুল ইসলাম | Aj Srishti Sukher Ullase
তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে। যদি পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নবপ্রেমজালে। যদি থাকি কাছাকাছি, দেখিতে না পাও ছায়ার মন্ডল আছি না আছি- তবু মনে রেখো। নৌকাযাত্রা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র ধরিত্রারে— এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।
Also Read: নারী কবিতা | Nari Kobita – কাজী নজরুল ইসলাম
কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে, সমুদ্রে হল হারা । হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন— শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন। পশ্চিমে আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার, দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে নৌকাযাত্রা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু-মুসলমান। এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খৃস্টান ! এসো ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার। এসো হে পতিত, হোক অপনীত সব অপমানভার। মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা, মঙ্গলঘট হয় নি যে নৌকাযাত্রা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।