মধ্যবিত্ত - কিঙ্কর আহসান। মধ্যবিত্ত রিভিউ। কিঙ্কর আহসানের উপন্যাস রিভিউ
জীবন তো এখন ধার করা!
আমরা মুগ্ধ হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি ।
সব শিখিয়ে, পড়িয়ে দেয় টিভি , সিনেমা , নাটক , বিজ্ঞাপন। কীভাবে ভালোবাসি বলতে হবে , বুলাতে হবে মমতার পরশ, কীভাবে দুঃখ পেতে হবে , আনন্দের সময় দু-হাত ছড়িয়ে দিতে হবে আকাশে সব , সব আমরা শিখে নিচ্ছি , বুঝে নিচ্ছি ।
মেকি সব। পরিমিত সব ।
ভালোবাসার সেই তীব্রতা কই?
দুঃখের সেই গভীরতা আজ আর হাহাকার তৈরি করে না বুকে। সব যেন জানাতে হবে। অপরকে জানানোর জন্য, ছোট করার জন্য, বড় করার জন্যই জীবন।
শো অফ যাকে বলে!
মন খুলে দুটো কথা বলার সময় নেই আমাদের। শিশু মন বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। চাঁদের আলোর চেয়েও ভালো এখন কোন শো-পিচ! ঝাড়বাতির আলো জরুরি হয়ে পড়েছে!
প্রেয়সীকে আলিঙ্গন , কাছে টেনে নেয়া , স্পর্শ করা সব যেন নিয়মমাফিক । বড্ড তাড়াহুড়ো । ফুরিয়ে যাবে এসব একদিন। যাচ্ছে!
সত্যিকারের সম্পর্ক হিসেব নিকেশ করে হয়না । লোকসানের কথা মাথায় রেখে ভালোবাসা যায়না।
আজকাল মানুষের মাঝে প্রাণ নেই। মানুষ মরছে। মরছে পৃথিবী। প্রাণশক্তিতে ভরপুর পৃথিবীতেও প্রাণ নেই আর। আহারে!
কথা গুলো আমার নয়। কথাগুলো লিখেছেন সময়ের অন্যতম পাঠকপ্রিয় লেখক কিঙ্কর আহসান, তার উপন্যাস 'মধ্যবিত্ত'তে।
উপন্যাসটি পড়ে এই মুহূর্তে শেষ করলাম। শেষ করার সাথে সাথেই বসে পড়লাম তার রিভিউ লিখতে।
এমনটা করা ঠিক নয়। কারন একজন পাঠক রিভিউ পড়তে আসেন, সে যেন বুঝতে পারে যে উপন্যাসটি পড়েছে তার অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা কেমন হয়েছে তা জানতে।
তাই রিভিউ একটু সময় নিয়ে লিখলে হয়তো বেশি ভালো হয় ( এটা একান্তই আমার ধারনা )।
উপন্যাসটি শেষ করে আমি একরকম ঘোরের মাঝে আছি। যেন এই ঘোর থেকে বেড়িয়ে না যাই, তাই এখনি রিভিউ লিখতে বসে পড়লাম।
মধ্যবিত্ত এমন এক ধরনের শ্রেণী, যারা এক উপরেও নয় আবার এক নিচেও নয়, দুটোর মাঝামাঝি একটা অবস্থানে ঝুলে থাকে।
তাদের আবেগ, অনুভূতি, দুঃখ, কষ্ট সব বুকে জমিয়ে রাখে। রাখতে রাখতে একসময় তা জমাট বেঁধে যায়। তবুও তা কারো কাছে প্রকাশ করতে পারে না।
এমনই একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের অব্যাক্ত সব ঘটনা, সব কথা লেখক তার সুনিপুণ লেখনিশৈলী দিয়ে অনন্য ভাবে উপস্থাপন করেছেন এই উপন্যাসে।
গল্পের শুরুতে এক মধ্যবর্তী পরিবারের স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতায় চিকিৎসার জন্য। সাথে যায় বড় ছেলে, মেয়ে রুবি, তার স্বামী এবং তার ভাই।
এই উপন্যাসে গল্পের কথক হচ্ছেন বড় ছেলে।
তার মা'র অবস্থা ভীষণ খারাপ, মনে হয় বাঁচবেন না। সকলের চোখে মুখে বিষণ্ণতার ছাপ।
নতুন নতুন অনেকের সাথে পরিচয় হয়। তার মধ্যে একজনের নাম আকাশ।
তারা দুই ভাই - বোন তাকে আকাশ মামা বলে ডাকে। তার আচার-আচরণ, কার্যকলাপে তাদের বাবার তার উপর আত্মবিশ্বাসের জন্ম নেয়, দৃঢ় আত্মবিশ্বাস।
এদিকে টাকা-পয়সা শেষ প্রায়। বাবা দেশে ফিরে গেছে টানাপোড়নের সংসার থেকে টাকা জোগাড় করে পাঠাতে। টাকা পাঠায় আকাশ মামার কাছে। মামা টাকে পেয়ে পল্টি মারে, মানে টাকা মেরে দেয়।
এখান থেকে গল্প ক্রমাগত অগ্রসর হতে থাকে।
মাহবুবার কথা স্মরণ করা, বুনোর সাথে হঠাৎ গড়ে ওঠা নাম না জানা সম্পর্কের কথা।
উপন্যাসটি থেকে অনেক কিছু জানার আছে, শেখার আছে অনেক কিছু। মধ্যবর্তী পরিবারের দিন যাপনের কথা, সংকটের কথা, প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাওয়ার কথা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: লেখক কিঙ্কর আহসানের ১৫+ টি ফেসবুক স্টেটাস। ক্ষুদ্র কবিতা