ঠিক হবে কি আবার সব আগের মতো - ওসমান আলী। গল্প। ওসমান আলী'র গল্প


ঠিক হবে কি আবার সব আগের মতো - ওসমান আলী। গল্প। ওসমান আলী'র গল্প


রফিক চাকরি পাওয়ার পর তার বাবা কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর নিলেন। সে ই এখন ছোটভাই রনির পড়াশোনা সহ পরিবারের হাল ধরেছেন।

মায়ের ইচ্ছে চারজনের এই ছোট্ট সংসারটা যেন সবসময় এমনই থাকে। কখনো যাতে ফাটল না ধরে।

এক সন্ধায় স্বামী - স্ত্রী দুজনে চা খেতে খেতে গল্প করছিল। তাদের সন্তানেরা বাবা - মায়ের আদর্শে বড় হচ্ছে। অন্য ছেলেদের মতো বখাটে, ভবঘুরে, বদমেজাজি নয় তাদের ছেলেরা।

ছোট্ট সংসার খানি আরোও একটু সুখময় করতে বড় ছেলে রফিকের বিয়ে দিয়ে ঘরে ফুটফুটে সুন্দর একটা বউ নিয়ে আসলেন।

বিয়ের পর কিছুদিন বেশ ভালোই যাচ্ছিলো। যেমন বউয়ের আচার-ব্যবহার তেমন সুন্দরী। এক কথায় সর্বগুণে গুণান্বিতা। বাবা-মা বউয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

কিন্তু কিছুদিন পর থেকে কি যেন একটা বিষয় নিয়ে ছেলে বউয়ে লেগেই থাকতো।

একদিন ছেলে আর বউয়ের উচ্চস্বরে কথা বার্তা শুনে তাদের ঘরের দরজার সামনে দাড়িয়ে রইলেন মা। ভিতরে কি হচ্ছে তা বুঝার জন্যে।

বউ বলছে, 'তুমি সারাদিন গাধার খাটনি খেটে আসছো আর বাড়িতে বসে বসে এতগুলো মানুষ শুধু আরাম করে খাচ্ছে। এমনটা আর এখন থেকে চলবে না। তুমি তোমার বাবা-মাকে বলবে আমরা ভিন্ন খেতে চাই। আমাদেরও তো একটা ভবিষ্যৎ আছে নাকি?

রফিক কিছু বললো না চুপ করে রইলো। কীভাবে তার বাবা-মাকে একথা বলবে হয়তো সাহস যুগিয়ে উঠতে পারছে না।

দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকা মাও চুপ করে রইলো, হয়তো চোখ বেয়ে অশ্রুও পড়েছে সেদিকে খেয়াল নেই।

রাতে শান্তস্বরে স্বামীকে বললেন, এভাবে আর কতদিন?

স্বামী বললেন, কি কতদিন?

স্ত্রী বললেন, এইযে সারাদিন রফিক এত কাজ কর্ম করে যা রোজগার করে তা সবাই মিলে খেয়ে শেষ করে ফেলছি। তারতো একটা ভবিষ্যৎ আছে।

স্বামী আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন।

একদিন সকালে ছেলে আর বউয়ের এমন কথোপকথন নিজ কানে শুনলেন বাবা। সেদিনই তাদের আলাদা করে দিলেন। আর ছেলে বোবার মতোন দাড়িয়ে রইলো একটি কথাও বলল না। হয়তো মনে মনে সেও এইটাই চায়।

সংসার চালাতে টাকার প্রয়োজন হয়।  তাই বৃদ্ধ বাবা বেড়িয়ে পড়লেন কাজের খোঁজে।

কিছুদিন খোঁজাখুঁজির পর ছোটখাটো একটা দোকানে হিসাব-নিকাশ করার কাজ পেলেন বিনিময়ে অল্প কিছু বেতন দিবে।

কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর আবার সেই কর্মজীবনেই ফিরে আসতে হলো।

ছোট ছেলে রনিরও পড়াশোনা শেষ হলো। ভালো একটা চাকরি পেলো। বাবাকে কাজ ছেড়ে দিতে বললে বাবা এবার আর কাজ ছেড়ে দিলেন না।

ততদিনে বড় ছেলের ঘর আলো করে ফুটফুটে একটি কন্যাসন্তান হয়েছে। গতবছর সুন্দর একটি ফ্লাট কিনেছে।  এখন তারা সেখানেই থাকে।

কিছুদিন হলো রনিকেও বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের ক'দিন না যেতেই  রনির বউ তার বাবা-মার সেবা করতে নারাজ। কিন্তু রনি বউয়ের কথায় কান দেয় না। ফলে ঝগড়া-বিবাদ, কলহ লেগেই থাকতো সংসারে।

রনির অনিচ্ছা সত্যেও তার বাবা-মা তাদেরও আলাদা করে দিলেন। তারাও নতুন বাড়ি কিনেছে।

এখন এ বাড়িতে পড়ে রইলেন শুধু বৃদ্ধা স্ত্রী ও বৃদ্ধ স্বামী।
স্বামী সারাদিন কাজ করে যা রোজগার করে তা দিয়েই দুজনের সংসার কোনোরকম চলে যায়।

প্রত্যেক ঈদে ছেলেরা তাদের পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে আসে । যাবার সময় মা অসহায়ের মতো দৃষ্টিতে সন্তানদের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেউ ফিরেও তাকায় না।

গতবার থেকে তারা আর এখন ঈদেও ঘুরতে আসে না.....!

~ ওসমান আলী।

আরোও পড়ুন: খারাপ বাবা। ছোটগল্প। ওসমান আলী

Post a Comment

0 Comments