আরশিনগর - সাদাত হোসাইন। সাদাত হোসাইনের উপন্যাস রিভিউ




বই: আরশিনগর
লেখক: সাদাত হোসাইন 
প্রকাশনা: ভাষাচিত্র।
মুদ্রিত মুল্য: ৪৫০ টাকা।
পৃষ্টাসংখ্যা: ২৭১

আরশিনগর - সাদাত হোসাইন 


আরশিনগর উপন্যাসটি আরশির গল্প।
কাগজে শুধু কলম দিয়ে কিছু লিখে গেলেই কোন গল্পের সৃষ্টি হয় না। তাতে আরও কিছু উপাদান ঠিক মতো মেশাতে জানতে হয়। তাহলেই তা পাঠকের মনের আবেগে টোকা দেয়।পাঠকের জানতে ইচ্ছে করে তারপর , তারপর.........। গল্প এগিয়ে যায়। শেষ না হওয়া পর্যন্ত পাঠক বইটা ছাড়তে পারে না।

লেখক সাদাত হোসাইন এই কাজটিই করে গেছেন খুব দক্ষতার সাথে। একটি খুব সরল একটি গল্পকে তিনি খুবই দক্ষতার সাথে বলে পাঠককে নিয়ে গেছেন শেষ লাইন পর্যন্ত। যেমন- সদ্যোজাত আরশিকে তার মা মৃত্যু শয্যায় শুয়ে দেখছিলো আর মনে মনে বলছিলো, “ এই মানবজনম মা ছাড়া কি প্রবলভাবেই না বৃথা ।” আরেক জায়গায় লেখক মজিবরের মুখ দিয়ে বলিয়ে নেন, “বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে কৌশলী হতে হয় । সবচেয়ে বেশি কৌশলী হতে হয় বিপদে। ” এভাবেই মজিবরের জীবন সংগ্রামের টিকে থাকার কৌশলটা বলে দেন লেখক।

আমরা আজকাল পেপার খুললেই দেখি একই দলের মধ্যে কোন্দল চলছে। কি কারণে এই কোন্দল? সেটারও উত্তর পেলাম “ আরশি নগরে”। সেটা হলো , “ যোগ্য নেতা না থাকলে সবাই নিজেরে নেতা ভাববো এইটাই স্বাভাবিক। এজন্যই নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি কইরা ধ্বংস হইয়া গেলে হইব না। ” অর্থাৎ , এই সংলাপটির মধ্য দিয়ে যেন বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক খুনাখুনি বা দলগুলোর ভেতরের অন্তরদ্বন্দ্ব ফুটে ওঠে। যদিও এই উপন্যাসের সময়কাল কি , সেটা খুব স্পষ্ট হয়নি আমার কাছে।

আরশির জন্ম, পালিয়ে বেঁচে যাওয়া- সবই যেন সৃষ্টিকর্তার লেখা পাণ্ডুলিপির অন্তর্গত। তাই ডাক্তার রুবিনাও ভাবেন, “এই জগতটা অদ্ভুত এক চিত্রনাট্যের জগত। এখানে কেউ একজন গল্পগুলোকে নিরন্তর নিরবচ্ছিন্নতায় লিখে চলেছে। মানুষ কখনো তা ধরতে পারে, কখনো পারে না। ”
পড়ে মজা পেয়েছি আশ্রয় দাত্রীমিলির কাছে আরশি যখন গণিতের লব আর হর মনে রাখা শিখছিলো। মিলি বললো, “...দুধের হর থাকে ওপরে আর ভগ্নাংশের হর থাকে নিচে। কি মনে থাকবে ? ”

আমরা সব সময় নিজেকেই বেশি ভালোবাসি , যদিও অনেকে স্বীকার করতে চান না। এই সত্যটাও লেখক চমৎকারভাবে তুলে দিয়েছেন আরশি আর আসিফের কথোপকথনে । " মানুষ নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ভালবাসে বলেই সে তার সারা জীবনের জন্য নিজের মতো কাউকে চায়। কিন্তু সে কখনোই অন্যের মতো হতে চায় না। "

একই সাথে কি একজন মানুষ দুজন মানুষকে ভালবাসতে পারে?

আরশিরও এমন একটা সংশয় আছে। সে আসলে কাকে ভালবাসে ? আসিফকে? না কি তার একদা তার গৃহশিক্ষক বিধানচন্দ্রকে ? তাই হয়তো সে নিজের কাছেই প্রশ্ন রাখে , “কি অদ্ভুত এই জগত, কি অদ্ভুত এই জগতের ভাবনা, অনুভুতি, ভালোবাসা। মানুষ একজনের বুকের ভেতর ডুবে থেকেও জীবনভর খুঁজে ফেরে অন্য কাউকে। হয়তো মুহূর্তের জন্য কেবল সে তাকে দেখেছে, স্পর্শ করেছে, কিন্তু মাঝে মাঝে এক মুহূর্তের দেখা মুহূর্তের স্পর্শ রয়ে যায় জনম-জনম। অথচ সারাজীবন পাশে থাকা মানুষটার অজস্র স্পর্শও তাকে ছুয়ে যায় না। কি অদ্ভুত! মানুষ এমন বিচিত্র কেন? ”
এই উল্টো জগতের নাম আসলে আরশিনগর

রিভিউ লিখেছেন : ফারজানা হক।

রিভিউটি বইপোকাদের আড্ডাখানা নামক ফেসবুক গ্রুপ হতে সংগৃহীত 

Post a Comment

0 Comments