সৎ পাত্র ছড়া কবিতা - লেখক সুকুমার রায় | Satpatra Chora | সৎ পাত্র

কবি-পরিচিতি : শিশু-কিশোর পাঠকদের কাছে সুকুমার রায় একটি প্রিয় নাম। তাঁর আবোল-তাবোল, হ-য-ব-র- ল প্রভৃতি অতুলনীয় রচনার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সুকুমার রায় বিখ্যাত শিশু-সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পুত্র এবং বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও শিশু সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পিতা। সুকুমার রায়ের জন্ম ময়মনসিংহ জেলার মাশুয়া গ্রামে ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর। সুকুমার ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি একদিকে বিজ্ঞান, ফটোগ্রাফি ও মুদ্রণ প্রকৌশলে উচ্চশিক্ষা নিয়েছিলেন, অন্যদিকে ছড়া রচনা ও ছবি আঁকায় মৌলিক প্রতিভা ও উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের সঙ্গে গোড়ায় গলদ নাটকে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।



প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক অদ্ভুত ক্লাব। নাম 'ননসেন্স ক্লাব'। এই ক্লাবের পত্রিকার নাম ছিল সাড়ে বত্রিশ ভাজা। তাঁর রচনাগুলোও অদ্ভুত ও মজাদার। হাঁসজারু, বকচ্ছপ, সিংহরিণ, হাতিমি ইত্যাদি কাল্পনিক প্রাণীর নাম তাঁরই সৃষ্টি। বিখ্যাত সন্দেশ পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছেন সুকুমার রায়। আর একে কেন্দ্র করেই ঐ সময় সুকুমার রায়ের সাহিত্য প্রতিভা পূর্ণ বিকশিত হয়েছিল। সুকুমার রায় বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন প্রধানত খেয়াল রসের কবিতা, হাসির গল্প, নাটক ইত্যাদি শিশুতোষ রচনার জন্য। ছেলেবুড়ো সবাই তাঁর লেখা পড়ে আনন্দ পায়। সুকুমার রায়ের মৃত্যু হয় ১৯২৩ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর।]


                 সৎ পাত্র ছড়া সুকুমার রায়ঃ

শুনতে পেলুম পোস্তা গিয়ে

তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে?

গঙ্গারামকে পাত্র পেলে?

জানতে চাও সে কেমন ছেলে?

মন্দ নয়, সে পাত্র ভাল

রঙ যদিও বেজায় কালো;

তার উপরে মুখের গঠন

অনেকটা ঠিক প্যাচার মতন।

বিদ্যে বুদ্ধি? বলছি মশাই

ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়।

উনিশটি বার ম্যাট্রিকে সে

ঘায়েল হয়ে থামল শেষে।

বিষয় আশয়। গরীব বেজায়

কষ্টে-সৃষ্টে দিন চলে যায়।

মানুষ তনয় ভাইগুলো তার

একটা পাগল একটা গোয়ার

আরেকটি সে তৈরি ছেলে,

জাল করে নোট গেছেন জেলে।

কনিষ্ঠ তৰলা বাজায়

যাত্রা দলে পাঁচ টাকা পায়।

পঙরাম ত কেবল ভোগে

পিলের জ্বর আর পান্ডু রোগে।

কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,

কংসরাজের বংশধর!

শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের

কি যেন হয় গঙরামের।

যাহোক এবার পাত্র পেলে,

এমন কি আর মন্দ ছেলে?


ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না— সত্যি বলছি কুস্তি ক'রে তোমার সঙ্গে পারব না । মনটা আমার বড্ড নরম, হাড়ে আমার রাগটি নেই, তোমায় আমি চিবিয়ে খাব এমন আমার সাধ্যি নেই ! এস এস গর্তে এস, বাস করে যাও চারটি দিন, আদর ক'রে শিকেয় তুলে রাখব তোমায় রাত্রিদিন। হাতে আমার মুগুর আছে তাই কি হেথায় থাকবে না ? মুগুর আমার হালকা এমন ম বলে তোমায় লাগবে না। অভয় দিচ্ছি, আছ না যে? ধরব নাকি ? সলে ভেমার ३ का वाहन उখन ल ! আমি আছি. পিত্নী আছেন, আছেন আমার নয় ছেলে সবাই মিলে কামড়ে দেন মিথ্যে অমন ভয় পেলে৷


খানিক বাদে কহেন বাবু, কাতো-দেখি ভেবে নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় হতে নেবে? বস্তু কেন সবণপোরা সাগরডরা পানি? মাঝি সে কয়, আরে মশাহ, অত কি আর জানি?” বাবু বলেন, "এই বয়সে জানিসনেও তাকি? জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁ


আবার ভেবে কহেন বাবু, বলতো বেড়ে কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ বন্ত দেখি সূর্য চাদে গ্রহণ লাগে কেন? 


হাঁস ছিল সজারু, (ব্যাকরণ মানি না), হয়ে গেল “হাঁসজারু” কেমনে তা জানি না। বক কহে কচ্ছপে-“বাহনা কি ফুর্তি! ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি, চাপিল নিছার ঘাড়ে, ধড়ে মুড়ো সন্ধি। জিরাফের সাধ নাই মাঠে ঘাটে ঘুরিতে, ফড়িঙের ঢং ধরি সেও চায় উড়িতে। গর্ বলে, “আমারেও নিল কি ও লোগে? মোর পিছে লাগে কেন হতভাগা মোরগে? হাতিমিন দশা দেখ, থ-তিনি তালে জলে যাই, হাতি বলে, “এই নেলা জঙ্গলে চল ভাই। সিংহের শিং নেই, এই ভার - মল শিং হল পিষ্ট। সুকুমার রায়।


Also Read: নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর | সাহিত্য মহল


ঠিকানা চাও? বলছি শোন; আমড়াতলার মোড়ে তিন-মুখো তিন রাস্তা গেছে তারি একটা ধ'রে, চলবে সিধে নাকবরাবর ডানদিকে চোখ রেখে; চলতে চলতে দেখবে শেষে রাঙা গেছে থেকে। দেখবে সেথায় ডাইনে বায়ে পথ গিয়েছে কত তারি ভিতর ঘুরবে খানিক গোলকধাধার মত। তারপরেতে হঠাৎ বেঁকে ডাইনে মোচড় মেরে ফিরবে আবার বায়ের দিকে তিনটে গলি ছেড়ো তবেই আবার পড়লে এসে আমড়াতলার মোড়ে তারপরে যাও যেথায় খুশী চালিয়ো নাকো মোরে।


Also Read: চৈতী হাওয়া কবিতা – লেখক কাজী নজরুল ইসলাম | সাহিত্য মহল


আরে আরে জগমোহন-এস, এস, এস বতে পার কোথায় থাকে আদ্যানাথের মেশো? আদ্যানাথের নাম শোননি? খগেনকে তো চেনো? শ্যাম বাগচি খগেনেরই মামাশ্বশুর জেনো। শ্যামের জামাই কেষ্টমোহন, তার যে বাড়ীওলা (কি যেন নাম ভুলে গেছি), তারই মামার শালা; তারই পিশের খুড়তুতো ভাই আদ্যানাথের মেশো লক্ষ্মী দাদা, ঠিকানা তার একটু জেনে এসো।

Post a Comment

0 Comments