প্রবন্ধ রচনা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ভূমিকা: বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি ভাষা-সৈনিক। তিনি জাতির পিতা। বাঙালির অধিকার ও স্বতন্ত্র মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে এদেশের গণমানুষের মুক্তির জন্য পরিচালিত সকল আন্দোলনের তিনিই ছিলেন প্রধান চালিকাশক্তি। তার নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে আমরা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এবং দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তিনি ছিলেন বজ্রকণ্ঠের অধিকারী। তিনি সেই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কাঁপা মহান পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান। এ জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও আত্মত্যাগ চিরকাল স্বার্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
জন্ম: বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চের এক শুভক্ষণে গোপালগঞ্জ (সাবেক ফরিদপুর) জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
পিতা-মাতা: শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের সন্তান আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
শিক্ষা: বঙ্গবন্ধু ম্যাট্রিক পাস করেন গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুল থেকে। বিএ পাস করেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।
নেতৃত্ব: তিনি ছাত্রজীবন থেকেই দেশ ও দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন। ছাত্রজীবনেই তিনি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং সুভাষচন্দ্র বসুর সান্নিধ্য লাভ করেন ও রাজনীতি সংলগ্ন হয়ে ওঠেন। মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। তৎকালীন যেসব ছাত্র ও তরুণের প্রচেষ্টায় এ পরিষদ গঠিত হয় তাদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ ভাষার দাবিতে ধর্মঘট ডাকা হলে শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুব সহ অধিকাংশ ছাত্র নেতা গ্রেপ্তার হন। দীর্ঘকাল বঙ্গবন্ধু বাঙালির অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেন। ফলে বারবার তাকে জেল খাটতে হয়। ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু পূর্ব-পাকিস্তানে বাঙালির সব ধরনের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ৬ দফা কর্মসূচি উপস্থাপন করেন। ৬ দফা আন্দোলনকে দমন করবার জন্য পাকিস্তানি শাসকরা শেখ মুজিবুর রহমান সহ অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।
এই ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে গোপন বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেওয়া। এভাবে নেতৃত্বশূন্য করে আন্দোলন থামিয়ে দেওয়াই ছিল তাদের লক্ষ্য।
১৯৬৯ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের জোয়ারে আইউব খানের স্বৈরশাসন টিকে থাকতে পারেনি। ২২শে ফেব্রুয়ারি আইউব খান আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে সব রাজবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হন। কারামুক্ত শেখ মুজিবকে ২৩শে ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ সমাবেশে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের শতকরা ৮০ ভাগ আসনে বিজয়ী হয়। কিন্তু তাকে সরকার গঠন করতে দেয়া হয় না। বাধ্য হয়ে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন।
২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর অতর্কিত ঝাপিয়ে পড়ে ও ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জণগণ। নয় মাস যুদ্ধের পর ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় বাঙালির বিজয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তিনিই জাতিসংঘে বাংলায় প্রথম ভাষণ দেন। এভাবে শুধু বাঙালি জাতি নয়, বাংলা ভাষার মর্যাদাকে তিনি বিশ্বের মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
পরলোকগমন: ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের আক্রমণে ও নিষ্ঠুর আঘাতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, এ জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। টুঙ্গিপাড়ায় পারিবারিক গোরস্তানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। যে মাটির সান্নিধ্য ও যে প্রকৃতির পরিচর্যায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন, বেড়ে উঠেছিলেন, সেই মাটির সান্নিধ্য, প্রকৃতির শীতল স্নেহে ও একান্ত স্পর্শে তিনি শেষশয্যা গ্রহণ করেছেন।
উপসংহার: জাতির মহান নেতা হতে হলে যে সমস্ত গুণের প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর তার সবই ছিল। তিনি ছিলেন সাহসী ও স্বাধিনতা প্রিয়। সকল প্রকার নিপীড়ন নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অধিকার অর্জনের সংগ্রামে আপোসহীন। কোনো প্রকার ভীতি কিংবা দ্বিধা তাকে কখনো বিচলিত করেনি। বাংলা ছিল তাঁর দেশ, বাংলা ছিল তাঁর ভাষা এবং তিনি নিজেকে বলতেন 'আমি বাঙালি'।
কবির উপলব্ধিই যথার্থ, কোটি বাঙালির মনের কথা:
যতদিন রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরী-মেঘনা বহমান,
ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।
বি:দ্র: উপরে উল্লিখিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনাটি ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ হতে সংগৃহীত। এটি শুধু শিক্ষনীয় উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ১১ দফা কর্মসূচী কী / ১১ দফা আন্দোলন কী এবং কবে ঘোষনা করা হয়? ১১ দফা কর্মসূচির ১১টি দাবি কি কি?