বাংলা প্রবাদ প্রবচন । Bangla proverbs ( A to Z )
প্রবাদ প্রবচন । বাক্য দুটি একই মনে হলেও এ দুইয়ের মাঝে পার্থক্য বিদ্যমান আছে।
জীবনের সুদীর্ঘতম সময়ের অভিজ্ঞতা কিংবা কোনো চরম সত্য কথার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে প্রবাদ বলে।
আবার কোনো জ্ঞানী, বিজ্ঞ বা সৃষ্টিশীল ব্যাক্তির জীবন সম্পর্কে নিজস্ব যে ধারণা বা উপলব্ধি তার সংক্ষিপ্ত প্রকাশকে প্রবচন বলে।
বাংলা প্রবাদ প্রবচন সমূহ :
' অ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ।
অর্ধ সত্য মিথ্যা অপেক্ষা ভয়ঙ্কর।
অন্যায় করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।
অতি চালাকের গলায় দড়ি।
অগভীর জলে সফরী ফরফরায়েত।
অধিক সন্নাসিতে গাজন নষ্ট।
অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী।
অতি দর্পে হত লঙ্কা।
' আ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
আপন পায়ে কুড়াল মারা।
আঙুল ফুলে কলাগাছ।
আপনি বাঁচলে বাপের নাম।
আতুরে নিয়ম নাস্তি।
আসলে মানুষ নেই ঢেঁকি ঘরে চাঁদোয়া।
আগে দর্শনদারী পরে গুণবিচারী।
অসারের তর্জন গর্জন সার ( গুণহীনের অযথা তর্জন গর্জন )।
আস্তা কুড়ের পাত কখনও স্বর্গে যায় না।
আঙুর ফল টক।
আপনি শুতে ঠাই নেই শঙ্করাকে ডাকে।
আপনি ভালো ত জগৎ ভালো।
আপনি আচড়ি ধর্ম অপরে শিখাও। ( নিজে যা বিশ্বাস করে না বা মানে না, তা অন্যকে বিশ্বাস করাতে বা মানাতে চায়)।
আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নেয়া।
আপন হাত জগন্নাথ, পরের হাত এটো পাত।
' ই ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
ইচ্ছে থেকলে উপায় হয়।
ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়।
' উ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
উলু বনে মুক্তা ছড়ানো।
উৎপাতের কড়ি চিৎপাতে যায়।
উঠন্ত বৃক্ষ পত্তনেই চেনা যায়।
উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে।
' এ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
একবার না পাড়িলে দেখ শত বার।
আরও পড়ুন 👉 কবি - সাহিত্যিকদের উপাধি ও ছদ্মনাম
' ক ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
কত হাতি গেল তল, মশা বলে কত জল।
কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ।
কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা
কানা গরুর ভিন্ন পথ।
কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা।
কাম নাই কুত্তার আইলে আইলে দৌড়।
' খ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
খাচ্ছিলো তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হলো এড়ে গরু কিনে।
' গ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
গরীবের কথা বাসী হলে ফলে।
গতস্য শোচনা নাস্তি।
' ঘ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
ঘুঘু দেখেছ ফাঁদ দেখনি।
' চ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী।
চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ে ধরা।
চোরে চোরে মাসতুত ভাই।
চোরের মন পুলিশ পুলিশ।
' জ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
জাতে মাতাল, তালে ঠিক। বিচার মানি তাল গাছটা আমার।
জাতের নারী কালো ভালো, নদীর জল ঘোলা ভালো।
জ্যান্তে দেয়না চাল ভাজার খোলা, মরলে দেবে রামায়নের পালা।
জামাই কৈন্যার দেখা নাই, শুক্কুর বারে বিয়া।
জামাই মরলা হাঞ্জা রাইত / কান্দিয়া উঠইন পথা রাইত ( স্বামীর মৃত্যু হইছে সন্ধ্যায়।কিন্তু বউ মাঝ রাতে দুঃখে কেদে উঠলো )
জামা-জোব্বা বেশুমার
আক্কল বিনা ছারখার ( পোশাকের আড়ম্বর দ্বারা বুদ্ধির দৈন্য দূর করা যায় না )।
আরও পড়ুন 👉 ভ্রমণ পিপাসু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
' ঝ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
ঝি দিলাম হাই ঠাইন, পুত দিলাম বউ ঠাইন-আরদাশ করমু কার ঠাইন ( মেয়ে দিলাম মেয়ের জামাইর কাছে, ছেলেকে দিলাম বউয়ের কাছে। এখন কাকে আদেশ করব )।
' ট ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
টানবার যে সে না টানলে লাভ নাই কোন কানলে ( কেদে কোন কার্য উদ্ধার করা যায় না, যদি কর্তা বিরুপ থাকে )।
' ড ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
ডাঙ্গায় বাঘ, জলে কুমির।
' ঢ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
ঢেঁকির শব্দ বড় ( খালি কলসি বাঁজে বেশি )।
' ত ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
তিলক কাটলেই বৈষ্ণব হয় না।
তাল পুকুর নাম কিন্তু ঘটি ডুবে না।
তিলকে তাল করা।
তেল কম ভাজা মচ মচ।
তোমার আছে , আমার নাই
রস চুরিতে পাপ নাই
যদি কর বাড়াবাড়ি
থাকবে নাকো রসের হাড়ি।
তোমরা তো কও আহা, আমার গেছে টাহা ।
তোর তেল আঁচলে ধর, আমার তেল ভাড়ে ভর ( স্বার্থপর ব্যক্তি অন্যের স্বার্থ নষ্ট করে হলেও নিজের স্বার্থ ঠিক রাখে )।
' থ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়।
' দ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
দুর্জন বিদ্বান হইলেও পরিত্যাজ্য।
দশের লাঠি একের বোঝা।
দ্যাশ বুইঝ্যা ব্যাশ, পাথার বুইঝ্যা চাষ ।
( ' দ্যাশ ' মানে ' দেশ ' ; ' ব্যাশ ' মানে ' বেশ ' ; ' পাথার ' মানে ' জমি ' )।
দরিদ্রে আহার খোঁজে, ধনীতে খোঁজে ক্ষুধা।
দশচক্রে ভগবান ভূত।
' ধ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
ধরি মাছ না ছুই পানি।
ধর্মের ঢাক আপনি বাজে। ( পাপ কোন দিন চাপা থাকে না )।
ধীরে আটে বয়না, তার লাগ কেউ পায় না ( খরগোশ কচ্ছপের গল্পের কাহিনীটাই এই প্রবাধের অর্থ )।
ধান ভানতে শিবের গীত।
' ন ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা।
নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালো।
নিজের চরকায় তৈল দিন।
নগর পুড়িলে দেবালয় এরায়?
নিজের পোদে ন মন গু, আমারে বলে তোর খান ধু।
নুন আনতে পান্তা ফুরোয়।
নতুন নতুন খই এর মোয়া মচ মচ করে।
নদীতে নদীতে দেখা হয়,
কিন্তু বোনে বোনে দেখা হয় না।
আরও পড়ুন 👉 পৃথিবী, পর্বত, নদী, সাগর, চন্দ্র, সূর্য, সর্প শব্দের সমার্থক শব্দ বা প্রতিশব্দ
' প ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
পুরোনো চাল ভাতে বাড়ে।
পৈতে থাকলেই বামুন হয়।
পাইলাম থালে,
দিলাম গালে,
পাপ নাই তার,
কোন কালে ।
( পড়ে পাওয়া জিনিস এর কোন মালিকানা নেই , যেই পাবে সেই নেবে )।
পান্তা ভাতে ঘি নষ্ট, বাপের বাড়ী ঝি নষ্ট।
পাশের বাড়ী বিয়ালো গাই, সেই সুত্রে পাড়াতো ভাই।
পেট কাটলে মশাও মরে, হাতিও মরে।
পুরুষ রাগলে হয় বাদশা
নারী রাগলে হয় বেশ্যা।
পর্বতের মূষিক প্রসব।
পিপীলিকারর পাখা হয় মরিবার তরে।
পোলারে তুতিবুতি
মাইয়্যারে লাই
তার চৌদ্দ গুষ্ঠির নাই
নরকে ঠাই ।
পটল বুনলে ফাগুনে, ফলন বাড়ে দ্বিগুণে।
পতি বিনে গতি নেই।
পতি হারা নারী, মাঝি হারা তরী।
পয়সা নাই দুই আনা, বউ চায় সেয়ানা।
পতির পায়ে থাকে মতি, তবে তারে বলে সতী।
পরের হাতের পিঠা
খাইতে লাগে মিঠা !
পরের হাতের পান
খাইলে মুখে আসে গান !
আহ্লাদীলো ঢ্যাপের খই
এতো ঠমক পাইলি কই?
' ব ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
বিনে স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?
বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়।
বারো মাসে তেরো পার্বণ।
বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।
বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া।
বামুন গেল ঘর ত লাঙল তুলে ধর।
বেআক্কলরে আক্কল দিলে নিজের আক্কল ক্ষয়,
আক্কলরে আক্কল দিলে আরো আক্কল হয়।
বাতাসের সঙ্গে লড়াই করা ( বিনা কারণে ঝগড়া করা )।
বামুন গেল ঘর তো লাঙল তুলে ধর।
বারে বারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও থান, এবারে তোমায় ঘুঘু বধিব পরান।
বুকে বসে দাড়ি উপড়ানো ( আশ্রয়দাতা বা প্রতিপালকের অনিষ্ট সাধন করা )।
বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ।
বৌ ভাঈলে চাড়া শ্বাশুড়ি ভাঈলে খোলা। (পক্ষপাতিত্ব পুর্ন আচরন।)
বারো বচ্ছর চোংগার মইধ্যে থাকলেও কুত্তার ল্যাঁজ সোজা অয় না।
বিপদে পড় নহে ভয় অভিজ্ঞতায় হবে জয় ( বিপদে পড়েই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়, আর অভিজ্ঞতার বলেই বিপদকে জয় করা যায়। তাই বিপদে ভয় পেতে নেই )।
বেঙ ডাকে ঘন ঘন, শীঘ্র হবে বৃষ্টি জান।
বড় উকুন লড়ে-চরে, ছোট উকুন কামড়ায়ে মারে।
বাইন্না কুইট্টা মরে কেউ, ক্ষুদ দিয়া পেট ভরে কেউ ।
বাতাসে পাতিয়া ফাঁদ, ধরে দিতে পারি চাঁদ।
'ভ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান বয়।
ভাই ভাই ঠাঁই ঠাঁই।
ভাইয়ের শত্রু ভাই, মাছের শত্রু ছাই।
ভাগের হতিন সখিনা, রাত পোহালে দেখি না ।
ভাত পায় না চা খায়, সাইকেল চালায়া বাথরুমে যায়।
ভালা মাইনসে মাইর খায়, গাল আতাইয়া বাড়িত যায়।
ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।
ভেক না ধরলে ভিক দিলে না। ( পেশা ও কাজের উপযোগী বেশভূষা দরকার হয়। )
ভরা পেটে সন্দেশে কয় ছুঁচোর গন্ধ।
ভাই বড় ধন,
রক্তের বাধন,
যদিও বা পৃথক হয়,
তবে, নারীর কারণ।
' ম ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
মাছ চিনে গভীর জল, পাখী চিনে উচু ডাল।
মাটিতে থাপ্পর পরলে, গুনাহগার চমকে উঠে।
মোটে মায় রান্দে না, পান্তায় তেরসা ।
মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল।
মায় কাড়ে গু মূত, হইড়্যে খায় ঘি, অমন দুখখর কথা কারে কৈমুগি ।
মায়ের পেটে ভাত নেই বউয়ের চন্দ্রহার।
মাটিতে থাপ্পর পরলে, গুনাহগার চমকে উঠে।
মারবো তো গন্ডার, লুটবো তো ভান্ডার।
মাংসে মাংস বাড়ে,
ঘৃতে বাড়ে বল,
দুধে শুক্র বাড়ে,
শাকে বৃদ্ধি মল।
মাইয়্যার নাম রাম বালা, কান্দে আর বান্দে ছালা ।
' য ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
যে খাইছে সাত বার, তার জন্য ভাত বাড়, যে খায়নাই একবার, তার জন্য চাল ঝাড়।
যার জন্য ধোঁয়া দেয়া, তারে মশায় খায়।
যার দউলতে রামের মা, তারে তুমি চেননা।
যেখানে মজিবে কায়া, নাও থুইয়া তরেও জায়া ।
যে নয় আমার অনুগত, কাইন্দা প্রেম বাড়াবা কত?
যে যেমন ঢেমনি জগত দ্যাখে তেমনি।
যত দোষ নন্দ ঘোষ।
যেমন কর্ম, তেমন ফল।
যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা।
যোগী চিনি ধিয়ানো,
ছাগি চিনি বিয়ানো,
ঘোড়া চিনি কানো,
নাপতর পুত যে বাদশা অইছইন তানে চিনি দানো।
' র ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
রান্ধিয়া বারিয়া যেই বা নারী,
পতির আগে খায়,
সেই নারীর বাড়িতে শীঘগীর,
অলক্ষী হামায়।
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, উলুখাগরার প্রাণ যায়।
' ল ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু।
লাং (প্রেমিক) ধরলে ঠাকুর, মাছ ধরলে মাগুর " কথ্য ভাষার এই প্রবাদ টাও একি অর্থে ব্যাবহার হয়।
আরও পড়ুন 👉 কবি সাহিত্যিকদের জন্ম ও মৃত্যু সাল ( যে কোনো লেখক ও লেখিকার জন্ম ও মৃত্যু সাল দেখুন )।
' শ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
শাক দিয়ে মাছ ডাকা।
শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা।
শুঁটকির বাজারে বিড়াল চৌকিদার।
শুনরে বাপু চাষার বেটা,
মাটির মধ্যে বেলে যেটা,
তাতে যদি বুনিস পটল,
তাতে তোর আশার সফল।
শুয়োর বড় হলেও হাতি হয়না।
শোনরে বাপু চাষার পো,
সুপারী বাগে মান্দার রো।
মান্দার পাতা পচলে গোড়ায়,
ফড়ফড়াইয়া ফল বাড়ায়।
শরিরের নাম মহাশয়, যাহা সহাও তাহাই সয়।
' স ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
সেদিন আর নাইরে নাথু, খাবলা খাবলা খাবা ছাতু।
সারাদিন দিন অনে আর হনে/ হাই আইলে বারা বানে।
সাঁতার না জানলে, বাপের পুকুরেও ডুবে মরে।
সুপারীতে গোবর, বাশে মাটি, অফলা নারিকেল শিকর কাটি।
সময় বাহিয়া যায়, নদীর স্রোতের প্রায়।
সাত মন তেলেও পুড়বে না, রাধাও নাচবে না।
' হ ' দিয়ে রচিত প্রবাদ প্রবচন :
হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল?
হওয়া ছল যায় গড়াগড়ি, পেটের ছলের জন্য খাড়ু গড়ি।
হাট-বাজারে লজ্জা নাই, ঘড়ে ফুলের কুড়ি।
হাত দিয়ে হাতি ঠেলা।
হাটে হাঁড়ি ভাঙা।