কবি জসিমউদ্দীনের পরিচিতি ( জন্ম, মৃত্যু, সাহিত্যকর্ম, পুরস্কার )। Biography of Josim Uddin.
১ জানুয়ারি ১৯০৩ সালে ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জসীমউদ্দিন জন্মগ্রহণ করেন তার নানার বাড়িতে। তার পিতা মৌলানা আনছার উদ্দিন মোল্লার বাসাও একই এলাকার গোবিন্তপুরে। কবির মাতার নাম আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট।
জসীমউদ্দিন সহ কবিরা মোট চার ভাই বোন। কবির বড় ভাইয়ের নাম আলহাজ্ব মফিজ উদ্দিন মোল্লা, তার সেজো ভাইয়ের নাম নুরুউদ্দীন আহম্মদ এবং একমাত্র ছোট বোনের নাম নুরুননাহার সাজু।
কবি জসিমউদ্দীন একাধারে কবি, লেখক, ঔপন্যাসিক ও গীতিকার।
জসিম উদ্দিনকে পল্লী কবি বলা হয় কেন? কারণ কবি জসীমউদ্দিন তার কবিতায় পল্লীর জনজীবনের চিত্র তুলে ধরেন। তাই কবি জসীমউদ্দিন কে ' পল্লী কবি ' বলা হয়।
কবি জসীমউদ্দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং কর্মজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে তিনি দীর্ঘ দিন সরকারের প্রচার বিভাগে কাজ করেছেন।
কবি জসীমউদ্দিনের সাহিত্যকর্ম :
পল্লী কবি জসীমউদ্দিন তার কবিতায় পল্লী বা গ্রামবাংলার জনজীবন ও প্রকৃতির রুপ সহজ ও সাবলীল ভাষায় সকলের বোধগম্য ভাবে তুলে ধরেন।
জসীমউদ্দিন তার ছাত্র জীবনেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় রচনা করেন ' কবর ' কবিতা যা প্রবেশিকা শ্রেণীর বাংলা সংকলনে স্থান পায়।
কবি জসীমউদ্দিনের কাব্যগ্রন্থ গুলো হচ্ছে :
- নকশী কাঁথার মাঠ ( ১৯২৯ )।
- রাখালী ( ১৯২৭)।
- সকিনা ( ১৯৬৯ )।
- মহরম।
- সুচয়ী ( ১৯৬১)।
- ধানখেত ( ১৯৩৩)।
- দুমুখো চাঁদ পাহাড়ি ( ১৯৮৭ )।
- মাটির কান্না ( ১৯৫১ )।
- বালুচর ( ১৯৩০ )।
- মা যে জননী কান্দে ( ১৯৬৩ )।
- হাসু ( ১৯৩৮)।
- রুপবতি ( ১৯৪৬ )।
- পদ্মা নদীর দেশে ( ১৯৬৯ )।
- ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে ( ১৯৬২ )।
- হলুদ বরণী ( ১৯৬৬ )।
- এক পয়সার বাঁশী ( ১৯৫৬ )।
- জলে লেখন ( ১৯৬৯ )।
- কাফনের মিছিল ( ১৯৮৮ ) ।
- সোজন বাধিয়ার ঘাট ( ১৯৩৪ )।
- রঙিলা নায়ের মাঝি ( ১৯৩৫)।
কবি জসীমউদ্দিন কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও আরো রচনা করেন স্মৃতিকথা, ভ্রমণকাহিনী, নাটক, উপন্যাস ও সঙ্গীত।
কবি জসিমউদ্দীনের লেখা স্মৃতিকথা :
- ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায় ( ১৯৬১ ) ।
- জীবন কথা ( ১৯৬৪ )।
- স্মরণের সরণী বাহি ( ১৯৭৮ )।
- স্মৃতিপট ( ১৯৬৪ )।
- যাদের দেখেছি ( ১৯৫১ )।
আরও পড়ুন 👉 কবি - সাহিত্যিকদের উপাধি ও ছদ্মনাম ( লেখক ও লেখিকাদের ছদ্মনাম ও উপাধি )।
কবি জসিমউদ্দীনের লেখা নাটক :
- আসমান সিংহ ( ১৯৮৬ )।
- পল্লীবধূ ( ১৯৫৬ )।
- পদ্মাপার ( ১৯৫০ )।
- মধুমালা ( ১৯৫১ )।
- বেদের মেয়ে ( ১৯৫১ )।
- ওগো পুস্পধনু ( ১৯৬৮ )।
- গ্রামের মেয়ে ( ১৯৫৯ )।
কবি জসিমউদ্দীনের লেখা ভ্রমণকাহিনী :
কবি জসিমউদ্দীন বেশ কিছু ভ্রমণকাহিনী রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য ভ্রমণকাহিনী গুলো হচ্ছে :
- হলদে পরির দেশে ( ১৯৬৭ )।
- জার্মানীর শহরে বন্দরে ( ১৯৭৫ )।
- যে দেশে মানুষ বড় ( ১৯৬৮ )।
- চলে মুসাফির ( ১৯৫২ )।
কবি জসিমউদ্দীনের লেখা সঙ্গীত গুলো হচ্ছে :
কবি জসিমউদ্দীন তার জীবদ্দশায় অসংখ্য গান রচনা করেছেন।
- জারি গান ( ১৯৬৮ )।
- মুর্শিদী গান ( ১৯৭৭ )।
কবি জসিমউদ্দীনের উল্লেখযোগ্য কিছু গান, যেই গান গুলো বহুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেই গান গুলোর শিরোনাম নিচে দেওয়া হলো।
কবি জসিম উদ্দীনের গান :
- প্রানো শখি রে ঐ শুনে কদম্ব তলে।
- নদীর কূল নাই কিনার নাই।
- আমার সোনার ময়না পাখি।
- আমার গলার হার খুলে নে।
- আমার হার কালা করলাম রে।
- আমায় ভাসাইলি রে।
- আমায় এতো রাতে।
- কেমন তোমার মাতা পিতা।
- ও বন্ধু রঙিলা।
- রঙিলা নায়ের মাঝি।
- নিশিতে যাইও ফুলবনে ও ভোমরা।
- ও বাজান চল যাই মাঠে লাঙল বাইতে।
- ও আমার দরদি আগে জানলে।
- বাঁশরি আমার হারাই গিয়াছে।
- আমার বন্ধু বিনুধিয়া।
- বাদল বাঁশি ওরে বন্ধু।
- গাঙ্গের কূলরে গেলো ভাঙিয়া।
- ও তুই যারে আঘাত হানলিরে মনে।
- ও আমার গহীন গানের নায়া।
- বালু চরের মেয়া।
কবি জসীমউদ্দিন শিশুদের জন্যও লেখালেখি করেন। শিশুদের জন্য কবি জসীমউদ্দিনের উল্লেখযোগ্য রচনা হলো ' ডালিম কুমার ( ১৯৮৬ )'।
আরও লিখেছেন, " বাঙালির হাসির গল্প; ১ম খন্ড ( ১৯৬০ ), ২য় খন্ড ( ১৯৬৪ ) "।
কবি জসিমউদ্দীন উপন্যাস লিখেছেন, ' বোবা কান্না ( ১৯৬৪ )।
আরও পড়ুন 👉 ভ্রমণ পিপাসু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কবি জসীমউদ্দিন যেসব পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন :
- প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার (১৯৫৮)।
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ১৯৭৪ সালে কবি জসীমউদ্দিন প্রত্যাখ্যান করেন।
- একুশে পদক ( ১৯৭৬ )।
- স্বাধিনতা পুরস্কার ( ১৯৭৮, মরণোত্তর )।
- ডি. লিট ডিগ্রি লাভ করেন, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে।
কবি জসীমউদ্দিনের জীবনাবসান ঘটে ১৪ মার্চ ১৯৭৬ সালে ঢাকায়।