জুতা-আবিষ্কার
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কহিলা হবু, 'শুন গো গোবুরায়, কালিকে আমি ভেবেছি সারা রাত্র
মলিন ধুলা লাগিবে কেন পায়
ধরণী-মাঝে চরণ-ফেলা মাত্র! তোমরা শুধু বেতন লহ বাঁটি,
রাজার কাজে কিছুই নাহি দৃষ্টি । আমার মাটি লাগায় মোরে মাটি,
রাজ্যে মোর একি এ অনাসৃষ্টি! নহিলে কারো রক্ষা নাহি আর।'
শীঘ্র এর করিবে প্রতিকার,
শুনিয়া গোবু ভাবিয়া হলো খুন,
পণ্ডিতের হইল মুখ চুন
দারুণ ত্রাসে ঘর্ম বহে পাত্রে।
পাত্রদের নিদ্রা নাহি রাত্রে।
রান্নাঘরে নাহিকো চড়ে হাঁড়ি,
কান্নাকাটি পড়িল বাড়ি মধ্যে,
অশ্রুজলে ভাসায়ে পাকা দাড়ি
কহিলা গোবু হবুর পাদপদ্মে,
আরও পড়ুনঃ মেলা কবিতার লেখক বা রচয়িতা আহসান হাবীব - সাহিত্য মহল
*যদি না ধুলা লাগিবে তব পায়ে, পায়ের ধুলা পাইব কী উপায়ে!”
শুনিয়া রাজা ভাবিল দুলি দুলি,
কহিল শেষে, ‘কথাটা বটে সত্য কিন্তু আগে বিদায় করো ধূলি,
ভাবিয়ো পরে পদধুলির তত্ত্ব। ধুলা-অভাবে না পেলে পদধুলা
তোমরা সবে মাহিনা খাও
মিথ্যে, কেন-বা তবে পুষিনু এতগুলা
উপাধি-ধরা বৈজ্ঞানিক ভৃত্যে?
আগের কাজ আগে তো তুমি সারো, পরের কথা ভাবিয়ো পরে আরো।