আমি ও মন ~ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। কবিতা - আমি ও মন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কবিতা



আমি ও মন ~ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। কবিতা - আমি ও মন। রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কবিতা


           আমি ও মন
রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন


...মন! তুমি কোথায় কোথায়? 

দিবানিশি খুঁজে মরি, পাই না তোমায়। 

কোন শেফালীর শাখে কোন পাপিয়ার ডাকে 

আকুল উদাসভাবে উন্মাদের প্রায়। 

অন্বেষণ কর যাঁর দেখা কি পেয়েছ তাঁর? 

তথাপি ধরিতে তাঁরে প্রাণে সাধ যায়? 

অবস বিভল প্রাণে ছুটে যাও, হায়। 

অথবা কি নিরাশার তীব্র বেদনায় 

ইতস্ততঃ বনে বনে কোন সুখ অন্বেষণে 

ভ্রমিতেছ অহর্নিশি আকুল হিয়ায়? 

আহা! মন! যাঁরে চাও, সে জন কোথায়? 

আত্মহারা মন! তুমি কোথায় কোথায়? 

ঘুরিয়া বেড়াও তুমি কিসের আশায়? 

কোন শ্মশানের ঘাটে, কোন নিরজন মাঠে, 

কোন তটিনীর স্রোতে ভাসায়েছ কায়? 

তাই কি খুঁজিতে গিয়ে পাই না তোমায়? 


যথেষ্ট হয়েছে মন! যেয়োনাক আর 

ভ্রনিতে কল্পনা রাজ্যে ছাড়িয়ে সংসার। 

এস শান্ত হও ভাই, আর ঘুরে কাজ নাই, 

জান তুমি চিরবন্দী সংসার-রাজার? 

অলসের বেড়ী পায়, কত দূরে যাবে, হায়! 

তব অপেক্ষায় আছে গৃহকারাগার। 

ভুলিয়ে আপন পর ত্যজি এ মায়ার ঘর, 

যেয়োনা স্বপনরাজ্যে খেলিতে আবার! 


( মনের উক্তি ) 

সোনার পিঞ্জরে ধরে রেখো না আমায় 

আমারে উড়িতে দাও দূর নীলিমায়! 

খুঁজিব তারার দলে কোন গগনের তলে, 

আমার সে নিরমাতা রয়েছে রয়েছে কোথায়, 

যেজন স্বপন ঘোরে পাগল করেছে মোরে, 

এমন উদাসী যেই করেছে আমায়, 

যাহার বাঁশীর স্বরে থাকিতে পারিনা ঘরে, 

যাহার যশের গান জগত শুনায়, 

সে অনন্ত প্রেমময় কেন চাহে এ হৃদয় 

অলক্কিত আকর্ষণে কোথা লয়ে যায়? 

দেখা দাও জগদীশ! রয়েছ কোথায়? 

অতল জলধিতলে, বিকচ কুসুমদলে, 

অথবা লুকায়ে আছ জলদের ছা'য়? 

বল প্রভু, কোন খানে নীচু কিম্বা উচ্চ স্থানে 

গভীর গুহায় কিম্বা হিমাদ্রিচূড়ায়-- 

জুড়াতে তাপিত প্রান থাক কি হে ভগবান 

ওয়েসিস--বারিরূপে মরু সাহারায়, 

শোকার্ত্তের ক্ষত হৃদি আরোগ্য করিত বিধি, 

শীতল প্রলেপরূপে বিরাজ তথায়? 

দেখা দাও প্রেমময়! রয়েছ কোথায়? 

কোথা আছ প্রেম-সিন্ধু জগত-ঈশ্বর? 

আমি যদি হইতাম চারু সুধাকর, 

শুন্য পথে ঘুরিতাম নীলাকাশে ভাসিতাম, 

আমার আলোকে ধরা হ'ত মনোহর। 

তুমি থাক কোন খানে পিপাসা-ব্যাকুল প্রাণে 

তোমারে খুঁজিতে গিয়া হতেম অমর। 

জলদ পবন ভরে উড়িয়ে গগন পরে 

আসিয়া পড়িত কভু আমার উপর। 

ধূসর মেঘের তলে লুকাতাম কুতুহলে 

বিস্ময়ে দেখিত চেয়ে তারকা নিকর! 

দেখা দাও প্রেমসিন্ধু জগৎ ঈশ্বর! 


অথবা হতেম যদি আকাশের তারা 

তোমারি বিধান মতে ভ্রমিয়া অনন্ত পথে, 

নীলাকাশে ছড়াতেম কনকের ধারা! 

ঘুরিতে ফিরিতে কভু আপনা ভুলিয়া প্রভু 

ছুটিতাম তব পানে হয়ে আত্মহারা! 

হায়! কেন হই নাই আমি ক্ষুদ্রতারা! 


অথবা হতেম যদি মলয় সমীর- 

তাপিতেরে জুড়াইয়া সৌরভের ভার নিয়া 

ছুটিতাম তব আশে হইয়া অধীর! 

তোমারে খুঁজিতে গিয়া স্বর্গের অমিয়া পিয়ে, 

অমর হতেম আমি সায়াহ্ন সমীর! 

আমি কেন হই নাই মলয় সমীর? 


আমি যদি হইতাম বসন্ত কোকিল- 

ললিত করুণ স্বরে সদা ডাকিতাম তোরে, 

আমার গানের তান বহিত অনিল! 

প্রীতি ভক্তি মাখা প্রাণে তব স্নেহ গুনগানে 

রত থাকিতাম ভুলে সংসারে জটিল। 

সাহায্য করিলে বায় উড়িতাম নীলিমায় 

দেখিতে বিস্তৃত কত গগন সুনীল! 


অথবা হতেম যদি যূথিকা-মুকুল- 

স্নিগ্ধ সাঁঝে ফুটিতাম, তোমারেই ভাবিতাম, 

দেখিতে তোমায় বিভু, হতেম আকুল! 

তৃষিত বিহ্বল প্রাণে চাহিয়া তোমার পানে, 

জাগিয়া সারাটি নিশি আমি ক্ষুদ্র ফুল, 

প্রাণে মরিতাম পেতে তব পদধূল! 


দেখা দাও দীনবন্ধু! থাক হে কোথায়? 

তুমি প্রভু থাক যথা সকলি অমর তথা, 

বিচক প্রসূনমালা তথা না শুকায়। 

চির বসন্তের দেশে থাক কি মোহন বেশে। 

অমিয়া সরসী বক্ষে শতদল প্রায়? 


প্রাণ মনমুগ্ধকর কোকিলের কুহুস্বর, 

সঙ্গীত-দেবতারূপে বিরাজ কি তায়? 

ললিত লতিকাসনে খেলা করি ফুল্ল মনে, 

যাও কি মিশিয়া ধীরে মৃদু মলয়ায়? 

সুখের স্বপন হয়ে সুধা বর্ষ এ হ্রদয়ে 

দেখাও স্বরগধাম রচি কল্পনায়? 

সুস্নিগ্ধ জলদপ্রায় ঢাল বারি এ ধরায় 

ভাস কি তটিনী-স্রোতে লহরীমালায়? 

করি প্রীতি বরিষণ জুড়াও তাপিত জন, 

চাহিলে তোমার পানে শান্তির আশায়? 


আশার তপন বেশে দেখা দাও নভো মাঝে, 

ভুলোক প্লাবিত কর শুভ্র চন্দ্রিকায়? 

একাই সহস্র কোটী নিজে তুমি, হায়! 

না বুঝিয়া খুঁজি তোমা যথায় তথায়! 

নানা ভাবে নানা জন পূজিতেছে ও চরণ, 

যে নামে যাহার রুচি ডাকিছে তোমায়! 

দেখি গুণ নানা মত নাম দেয় শত শত

কোটী শত কোটী রূপ ভাবে কল্পনায়। 

তুমি ত রয়েছ মনে, বৃথা খুঁজি বনে বনে, 

বুঝিলাম প্রেমময়! লুকাবে কোথায়? 

হৃদয়ের ধন তুমি রয়েছে হিয়ায়!



আরও পড়ুন: জীবন বিনিময় ~ গোলাম মোস্তফা। কবিতা - জীবন বিনিময়। গোলাম মোস্তফার কবিতা

Post a Comment

0 Comments