দীর্ঘ দিন পর। ছোটগল্প। ওসমান আলী''8



দীর্ঘ দিন পর

রিমু আপু তুমি,তুমি এখানে। কে তুমি আমায় আপু বলছো কেনো? আমায় চিনতে পার নি? আমি রুণা,তোমার ছোট বোন।

একথা শুনেই রিমু থমকে দাড়ালো। সবকিছু কেমন যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেলোদু-চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়তে শুরু করলো, মনে হলো যেন দীর্ঘ দিন ধরে বন্দি থাকা কোন অশ্রুর আজ মুক্তি হলো। রুণাও কাঁদলো তার আপুকে দেখে।

রিমু বললো,তুই এত বড়ো হয়ে গেছিস, কেমন আছিস? বাড়ির সবাই কেমন আছে? ভালো আছি,বাড়ির সবাই ভালো আছে। রুণা মায়ামাখা সুরে তুমি কেমন আছ আপু?আমার কথা ছাড়। বাবার যে হার্ডের সমস্যা ছিলো এখন কি অবস্থা? মা যে চোঁখে ঝাপসা দেখতো এখনো কি অভাবেই রান্না বাড়া করে? আর রাতুল ভাইয়ার কি খবর,কি করে এখন?   রাতুল ভাইয়া একটা ভালো চাকরি পাইছে, এখন সংসারের সব দায়িত্ব তার কাধেই। বাড়িতে একটা কাজের মহিলা রেখেছে রান্না-বান্না করার জন্য।

 আর বাবা, বাবার কি অবস্থা? রুণা কিছু বললো না,চুপ করে রইলো। রুণার চুপ করে থাকা দেখে রিমুর মুখটা মলিন হয়ে গেলো আর বললো দেখ আমার ধৈর্যের আর পরিক্ষা নিস না,তাড়াতাড়ি বল প্লিস বাবার কি হয়েছে।

তুমি বাড়ি ছেড়েছো আজ প্রায় দশ বছর হয়ে গেলো। তোমাদের সম্পর্কটা যখন না মেনে নিয়ে বাবা তোমাদের বাড়ি থেকে বেড় করে দেয় তখন থেকেই বাবার হার্ডের সমস্যাটা আরো বেড়ে যায়। বাবা দিনের পর দিন আরো অসুস্থ হয়ে পরছিল। কারো সাথে ঠিক মত কথা বলে না, ঠিক মত খাওয়া-দাওয়া করে না,কেমন যেন আনমনা হয়ে চুপচাপ বসে থাকে সবসময়। ক্রোধে আর অভিমানে কাউকে খুঁজতেও পাঠায় নি তোমাদের।

এভাবে প্রায় ১ বছর চলে যায়। তারপর হঠাৎ একদিন খুব ভরে ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখার জন্য বাবা পাগল হয়ে যায়। ভাইয়া ও তার বন্ধুরা মিলে তোমাকে অনেক যায়গায় খুঁজেছে কিন্তু কথাও খুঁজে পায় নাই। দিন শেষে যখন ভাইয়া বাসায় ফিরল বাবা তাড়াহুড়ো করে বলে,আমার রিমু কই?কই সে? আমার সামনে নিয়ে আয় আমি দু-চোখ ভরে তাকে শুধু একটু দেখব।

পাশে মা বসা, মা শুধু নিরবে আর্তনাদ করে যাচ্ছে আর কাঁদছে। তুমি চলে যাওয়ার পর থেকে মা'র মুখে আর কোনদিন হাসি দেখা যায় নাই। বাবার কথার উত্তরে ভাইয়া অশ্রু টলমল চোখে মাথাটা একটু নিচু করে আস্তে করে বললো রিমুকে কথাও খুঁজে পাওয়া যায় নাই বাবা। বাবা আর কোন কথা বললো না, চুপ করে বসে রইলো। কখন যে বাবার হৃদস্পন্দন কাজ করা বন্ধ করে বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো আমরা বুঝতেই পারলাম না। কিছুক্ষণ পর মা বাবাকে তুলতে গিয়ে দেখে বাবা আর নেই আপু,বাবা আর নেই বলেই রুণা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। রিমুর মাথায় যেন হঠাৎ বাজ পরলো,পরিবেশটা অস্বস্তিকর লাগছে,আশেপাশের কোলাহল তার কান অবধি পৌছাচ্ছে না। অবশেষে জোরে চিৎকার করে বাবা বলে ডাকতে গিয়েও ডাকতে পরলো না। কান্নায় ভেঙ্গে পরলো সে। কাঁদতে কাঁদতে বললো বাবা আমায় খুব ভালোবাসতো আমার জন্যই বাবা মারা গেলো বাবার মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী।
 একটার পর একটা দোষারোপ দিতেছে নিজেকে আর কাঁদছে। রুণা তাকে শাত্বনা দিতে দিতে বললো যা হবার তা হয়েছে চলো আপু বাড়ি ফিরে চলো মা তোমায় দেখলে অনেক খুশি হবে

রুণা ও রিমু মার্কেটে কথা বলছিলো ততক্ষণে রুণার দুলাভাই মানে রিমুর স্বামী এসে হাজির। পরিচয় হলো এবং রিমুর মুখ থেকে সব কিছু শুনলো। শোনার পর তারও চোখ থেকে দু'ফোটা অশ্রু পরলো। কথায় কথায় রুণার দুলাভাই রুণাকে জিজ্ঞেস করলো তুমি এখানে কথায় থেকে এলে? রুণা বললো এখানেই পাশের একটা কলেজে ভর্তি হয়েছি। কিছু কেনাকাটা করার ছিলো তাই এখানে এসেছি।আর ও অনেক কথা হলো।

অবশেষে দীর্ঘ দশ বছর পর নিজ গ্রাম নিজের বাড়িতে গেলো রিমু। গ্রামের সবকিছুই বদলে গেছে আগের মতো কিছুই নেই। বাড়ির প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করেই দেখে তার মা দাড়িয়ে আছে,চোখে ঝাপসা দেখতো বলে প্রথমে ভালোমতো চিনতে পরলো না তার মা।রিমু এক দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে মা মা বলে কাঁদতে শুরু করল। মা ময়েকে দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আর কাঁদলো কাঁদলো আর শুধু কাঁদলো.....!

দীর্ঘ অপেক্ষার যখন হঠাৎ অবসান ঘটে মুখের সব কথা তখন ফুরিয়ে যায়!

লেখকঃ ~ ওসমান আলী।

Post a Comment

0 Comments