ইলশে গুঁড়ি - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। ইলশে গুঁড়ি কবিতা। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা।




ইলশে গুঁড়ি - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। ইলশে গুঁড়ি কবিতা। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা।


        ইলশে গুড়ি
    সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত


 ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি 
 ইলিশ মাছের ডিম। 
 ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি 
 দিনের বেলায় হিম। 
 কেয়াফুলে ঘুণ লেগেছে, 
 পড়তে পরাগ মিলিয়ে গেছে, 
 মেঘের সীমায় রোদ হেসেছে 
 আলতা-পাটি শিম্। 
 ইলশে গুঁড়ি হিমের কুঁড়ি, 
 রোদ্দুরে রিম্ ঝিম্। 
 হালকা হাওয়ায় মেঘের ছাওয়ায় 
 ইলশে গুঁড়ির নাচ,- 
 ইলশে গুঁড়ির নাচন্ দেখে 
 নাচছে ইলিশ মাছ। 
 কেউ বা নাচে জলের তলায় 
 ল্যাজ তুলে কেউ ডিগবাজি খায়, 
 নদীতে ভাই জাল নিয়ে আয়, 
 পুকুরে ছিপ গাছ। 
 উলসে ওঠে মনটা, দেখে 
 ইলশে গুঁড়ির নাচ। 
 ইলশে গুঁড়ি পরীর ঘুড়ি 
 কোথায় চলেছে, 
 ঝমরো চুলে ইলশে গুঁড়ি 
 মুক্তো ফলেছে! 
 ধানেক বনে চিংড়িগুলো 
 লাফিয়ে ওঠে বাড়িয়ে নুলো; 
 ব্যাঙ ডাকে ওই গলা ফুলো, 
 আকাশ গলেছে, 
 বাঁশের পাতায় ঝিমোয় ঝিঁঝিঁ, 
 বাদল চলেছে। 
 মেঘায় মেঘায় সূর্য্যি ডোবে 
 জড়িয়ে মেঘের জাল, 
 ঢাকলো মেঘের খুঞ্চে-পোষে 
 তাল-পাটালীর থাল। 
 লিখছে যারা তালপাতাতে 
 খাগের কলম বাগিয়ে হাতে 
 তাল বড়া দাও তাদের পাতে 
 টাটকা ভাজা চাল; 
 পাতার বাঁশী তৈরী করে’ 
 দিও তাদের কাল। 
 খেজু পাতায় সবুজ টিয়ে 
 গড়তে পারে কে? 
 তালের পাতার কানাই ভেঁপু 
 না হয় তাদের দে। 
 ইলশে গুঁড়ি -জলের ফাঁকি 
 ঝরছে কত বলব তা কী? 
 ভিজতে এল বাবুই পাখী 
 বাইরে ঘর থেকে;- 
 পড়তে পাখায় লুকালো জল 
 ভিজলো নাকো সে। 
 ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি! 
 পরীর কানের দুল, 
 ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি! 
 ঝরো কদম ফুল। 
 ইলশে গুঁড়ির খুনসুড়িতে 
 ঝাড়ছে পাখা -টুনটুনিতে 
 নেবুফুলের কুঞ্জটিতে 
 দুলছে দোদুল দুল্; 
 ইলশে গুঁড়ি মেঘের খেয়াল 
 ঘুম-বাগানের ফুল।

আরও পড়ুন: অধম ও উত্তম - সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। অধম ও উত্তম কবিতা। সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা।

Post a Comment

0 Comments